ক্যামন আছেন ?
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই
এই প্রশ্নের
উত্তরে ঠোঁটের
কোনে বিরক্তির
চিহ্ন
একে আমরা জবাব দেই "ভালো নেই"
কিংবা দীর্ঘশ্বাস
মেশানো কন্ঠে বলি "
এই আছি আর কি " ।
" ভালো নেই " -
কথাটি চিন্তা ভাবনা ছাড়া খুব
সহজেই
আমরা বলে ফেলি।
আমরা ভালো থাকি না ।
কারন আমার
প্রেমিক
কিংবা প্রেমিকা আমার জন্মদিন
ভুলে গেছে,আমার
পোষা বিড়াল
অসুস্থ,আমি ফ্যানের
নিচে বসে ঘামছি,রাস্তার
জ্যামে বসে আছি ,আমার পছন্দ
মতো রান্না হয়
নি ,বাবা-
মা পড়াশোনার জন্য
"ঘ্যান ঘ্যান" করে ,
প্রিয় নায়ক কে "অমুক" সেক্স
বম্বের
সাথে দেখা গিয়েছে -
এমন হাজার-লক্ষ
কারনে আমরা ভালো থাকি না ।
ফেসবুকের ফিডে " মাথা ব্যাথায়
মরে যাচ্ছি" , "
পরীক্ষা জঘন্য
হয়েছে বেঁচে থেকে কি হবে ",
" অমুক
আমাকে ছেড়ে তমুকের ছবিতে লাইক
দিয়েছে,হে জীবন
তুমি এতো নিষ্ঠুর
কেনো"- এই ধরনের
স্ট্যাটাস
ভেসে বেড়ায় । আমরা খুব সহজেই
মরে যাই , খুব সহজেই
আমাদের জীবন
নিষ্ঠুর হয়ে যায়। ফার্মগেটে আনন্দ
সিনেমা হলের
সামনে এক
মহিলা তার পূর্ণ
বয়স্ক
প্রতিবন্ধী ছেলেকে কাঁধে নিয়ে
ঘুরে বেড়ায়। ছেলের
নাকের
সর্দি - মুখের
লালাতে তার ঘাড়
মাখামাখি হয় ।
সে রোজ
সকালে ছেলেকে কাধে নিয়ে
খাদ্যের সন্ধানে মানুষের
কাছে ঘুরে বেড়ায়
যাকে আমরা বলি ভিক্ষা করা ।
তিন বেলা খাবার
জোটানোর
সাথে সাথে সে মানুষের গালি ,
ঘৃণা ,
অবজ্ঞা এসব ও
মুঠো ভরে যোগায় ।
আমাদের
মতো তিনিও
"ভালো নেই"। ফার্মগেটের আরেক
দিকে রোকেয়া পার্কের
কাছে কোনও এক মন
খারাপ
করা বিকালে ২-৩
বছরের এক শিশু কে ফুটপাথে্র
ধুলা বালিতে গড়াগড়ি খেতে
দেখেছিলাম।
শিশুটির পা লোহার
শেকল
দিয়ে ফুটপাথের
গ্রিলের সাথে বাঁধা । মা সম্ভবত
পেটের
দায়ে কাজে গিয়েছে ।
জীর্ণ ময়লা সেন্ডু
গেঞ্জি পড়া সেই
শিশু কিংবা বুকের
মানিক কে শেকল
দিয়ে বেধে কাজে যাওয়া সেই
মা - দুই জন ই
আমাদের
মতো "ভালো নেই" । বাংলাদেশের
বেশিরভাগ মানুষ
রাত পোহালে চোখ
ডলতে ডলতে ভাতের
সন্ধানে তাদের দিন
শুরু করে । তাদের মাথা জুড়ে শুধু
থাকে শুভ্র
সাদা ভাতের ছবি ।
মাছ মাংস
কিংবা কোনও
লোভনীয় তরকারি না , শুধু
সাদা ভাত ,
কাচামরিচ এবং ডাল।
হ্যাঁ আমি সেই
ভাতের কথা ই
বলছি আমার- আপনার
ফ্রিজে যে ভাত
অযত্নে অবহেলায়
পচে , মন
মতো তরকারি না হলে যে ভাত
আমরা খেতে চাই না ,
মাঝে মধ্যে আঠার
অভাবে যে ভাত
দিয়ে আমরা কাগজ
লাগাই ।
পহেলা বৈশাখে পানি দিয়ে
পান্তা বানিয়ে বাঙালি সাজি ,
সেই ভাত । ভাতের কষ্ট কি জানেন ?
করেছেন কখনও ?
শাহবাগ থেকে টি এস
সি যেতে ফুটপাথে সস্পেনে ভরে
ভাত
বেচা হয় ।
রিস্কাচালক, ভ্যান চালক
রা শ্রান্ত-
পরিশ্রা ন্ত দেহে সেই সাদা ভাত
লবন-পিয়াজ-মরিচ-
ডাল দিয়ে মেখে বড়
বড় লোকমাতে যখন
খায় তখন তাদের
দেখলে বোঝা যায় ভাতের কষ্ট কি ।
তারাও আমাদের মতই
"ভাল নেই" । কখনও হসপিটাল
ঘুরে দেখেছেন ?
সাদা বেডে শুয়ে থাকা কিছু
মানুষ
মরে গিয়ে বাঁচতে চায়
। তারা বাঁচার জন্য
প্রার্থনা করে না।
মরার জন্য করে ।
তারাও
ভালো থাকে না ।
আমাদের মতই তাদের
জিজ্ঞেস করলে উত্তর
আসে -"ভালো নেই "
কোনও এক
সকালে কান্নার
শব্দে আমার ঘুম
ভাঙ্গে । দেখি আমার পাশের
বেডে শুয়ে থাকা মানুষ
টা নড়াচড়া করছে না ।
লোকটির
যে ক্যান্সার
হয়েছে পুরা বিশ্বে ১০০ জনের সেই
ক্যান্সার
হয়নি । দুরারোগ্য
সেই ক্যান্সারের
ওষুধ ই এখন ও
আবিষ্কার হয় নি ।
আগের রাতে তার ছোট ছেলের
সাথে আমার
ঘণ্টা খানেক
আড্ডা হয়েছে ।
আমি তাকে বাংলাদেশের
ব্যান্ডের গান দিয়েছি । ছেলেটার
স্বপ্ন ডাক্তার হবে ।
যে বয়সে আমরা প্রেমিক
প্রেমিকার
সাথে ঝগড়া করে স্ট্যাটাস
দেই " লাইফ সাকজ/ লাইফ ফাকজ " সেই
বয়সে সে বাবা কে নিয়ে হসপিটালে
দৌড়ায়
আর চোখে স্বপ্ন
রাখে ডাক্তার
হয়ে এই ক্যান্সারের
চিকিৎসা করার । বাবার
নড়াচড়া থেমে যাওয়ার
মুহূর্তে সেই
ছেলে টাও
ভালো ছিলো না,আমাদের
মতই । দিল্লির সেই
ধর্ষিতা মেয়েটিও
ভালো ছিলো না যখন
৫ জন হিংস্র পশু
তাকে ছিড়ে খুঁড়ে খাচ্ছিলো ।
তার যোনি ক্ষত বিক্ষত
করে ক্ষুদ্রান্তটি যে মুহূর্তে
টেনে বের
করে আনে সেই
মুহুরতেও
সে ভালো ছিলো না ,
যখন তাকে অত্যাচার শেষে বাস
থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়
তখন সে কিংবা তার
সাথের
সঙ্গি টি ভালো ছিলো না ।
মেয়েটির পরিবার মেয়েটির
অবস্থা দেখে ভালো ছিল
না । আমাদের মতই
তারা ভালো ছিল না।
সিরিয়াতে বন্দুকের
গুলি খাওয়া ছোট্ট
শিশু টি মৃত্যুর
আগে বলেছিল
-"ঈশ্বরকে আমি সব
বলে দিবো ।" তার ছোট্ট কোমল
মনে প্রশ্ন ছিল
এতো কষ্টের কারন
কি?
সে তো কারো ক্ষতি করে নি ।
মৃত্যু যন্ত্রণা থেকে এই
প্রশ্নের উত্তর
খুঁজে না পাওয়ার
কষ্টটা বেশি ছিল ।
ছেলেটিও
ভালো ছিল না ,আমাদের মতই ।
আমরা খুব সহজেই
বলে ফেলি আমরা ভালো নেই
।
জানি না "ভালো নেই"
কথাটা বলার
স্পর্ধা আমরা কোথায় পাই । এরপর যখন
ই
বলবেন ভালো নেই
উপরের মানুষ গুলোর
জায়গায়
নিজেকে অন্তত
একবার বসিয়ে দেখবেন ।
আশা করি কিছুটা হলেও
ভালো থাকবেন।