WE ARE UPDATING OUR SITE.PLEASE STAY WITH US

Thursday, January 8, 2015

ভালো আছি

ক্যামন আছেন ? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই প্রশ্নের উত্তরে ঠোঁটের কোনে বিরক্তির চিহ্ন একে আমরা জবাব দেই "ভালো নেই" কিংবা দীর্ঘশ্বাস মেশানো কন্ঠে বলি " এই আছি আর কি " । " ভালো নেই " - কথাটি চিন্তা ভাবনা ছাড়া খুব সহজেই আমরা বলে ফেলি। আমরা ভালো থাকি না । কারন আমার প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা আমার জন্মদিন ভুলে গেছে,আমার পোষা বিড়াল অসুস্থ,আমি ফ্যানের নিচে বসে ঘামছি,রাস্তার জ্যামে বসে আছি ,আমার পছন্দ মতো রান্না হয় নি ,বাবা- মা পড়াশোনার জন্য "ঘ্যান ঘ্যান" করে , প্রিয় নায়ক কে "অমুক" সেক্স বম্বের সাথে দেখা গিয়েছে - এমন হাজার-লক্ষ কারনে আমরা ভালো থাকি না । ফেসবুকের ফিডে " মাথা ব্যাথায় মরে যাচ্ছি" , " পরীক্ষা জঘন্য হয়েছে বেঁচে থেকে কি হবে ", " অমুক আমাকে ছেড়ে তমুকের ছবিতে লাইক দিয়েছে,হে জীবন তুমি এতো নিষ্ঠুর কেনো"- এই ধরনের স্ট্যাটাস ভেসে বেড়ায় । আমরা খুব সহজেই মরে যাই , খুব সহজেই আমাদের জীবন নিষ্ঠুর হয়ে যায়। ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের সামনে এক মহিলা তার পূর্ণ বয়স্ক প্রতিবন্ধী ছেলেকে কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ছেলের নাকের সর্দি - মুখের লালাতে তার ঘাড় মাখামাখি হয় । সে রোজ সকালে ছেলেকে কাধে নিয়ে খাদ্যের সন্ধানে মানুষের কাছে ঘুরে বেড়ায় যাকে আমরা বলি ভিক্ষা করা । তিন বেলা খাবার জোটানোর সাথে সাথে সে মানুষের গালি , ঘৃণা , অবজ্ঞা এসব ও মুঠো ভরে যোগায় । আমাদের মতো তিনিও "ভালো নেই"। ফার্মগেটের আরেক দিকে রোকেয়া পার্কের কাছে কোনও এক মন খারাপ করা বিকালে ২-৩ বছরের এক শিশু কে ফুটপাথে্র ধুলা বালিতে গড়াগড়ি খেতে দেখেছিলাম। শিশুটির পা লোহার শেকল দিয়ে ফুটপাথের গ্রিলের সাথে বাঁধা । মা সম্ভবত পেটের দায়ে কাজে গিয়েছে । জীর্ণ ময়লা সেন্ডু গেঞ্জি পড়া সেই শিশু কিংবা বুকের মানিক কে শেকল দিয়ে বেধে কাজে যাওয়া সেই মা - দুই জন ই আমাদের মতো "ভালো নেই" । বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ রাত পোহালে চোখ ডলতে ডলতে ভাতের সন্ধানে তাদের দিন শুরু করে । তাদের মাথা জুড়ে শুধু থাকে শুভ্র সাদা ভাতের ছবি । মাছ মাংস কিংবা কোনও লোভনীয় তরকারি না , শুধু সাদা ভাত , কাচামরিচ এবং ডাল। হ্যাঁ আমি সেই ভাতের কথা ই বলছি আমার- আপনার ফ্রিজে যে ভাত অযত্নে অবহেলায় পচে , মন মতো তরকারি না হলে যে ভাত আমরা খেতে চাই না , মাঝে মধ্যে আঠার অভাবে যে ভাত দিয়ে আমরা কাগজ লাগাই । পহেলা বৈশাখে পানি দিয়ে পান্তা বানিয়ে বাঙালি সাজি , সেই ভাত । ভাতের কষ্ট কি জানেন ? করেছেন কখনও ? শাহবাগ থেকে টি এস সি যেতে ফুটপাথে সস্পেনে ভরে ভাত বেচা হয় । রিস্কাচালক, ভ্যান চালক রা শ্রান্ত- পরিশ্রা ন্ত দেহে সেই সাদা ভাত লবন-পিয়াজ-মরিচ- ডাল দিয়ে মেখে বড় বড় লোকমাতে যখন খায় তখন তাদের দেখলে বোঝা যায় ভাতের কষ্ট কি । তারাও আমাদের মতই "ভাল নেই" । কখনও হসপিটাল ঘুরে দেখেছেন ? সাদা বেডে শুয়ে থাকা কিছু মানুষ মরে গিয়ে বাঁচতে চায় । তারা বাঁচার জন্য প্রার্থনা করে না। মরার জন্য করে । তারাও ভালো থাকে না । আমাদের মতই তাদের জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসে -"ভালো নেই " কোনও এক সকালে কান্নার শব্দে আমার ঘুম ভাঙ্গে । দেখি আমার পাশের বেডে শুয়ে থাকা মানুষ টা নড়াচড়া করছে না । লোকটির যে ক্যান্সার হয়েছে পুরা বিশ্বে ১০০ জনের সেই ক্যান্সার হয়নি । দুরারোগ্য সেই ক্যান্সারের ওষুধ ই এখন ও আবিষ্কার হয় নি । আগের রাতে তার ছোট ছেলের সাথে আমার ঘণ্টা খানেক আড্ডা হয়েছে । আমি তাকে বাংলাদেশের ব্যান্ডের গান দিয়েছি । ছেলেটার স্বপ্ন ডাক্তার হবে । যে বয়সে আমরা প্রেমিক প্রেমিকার সাথে ঝগড়া করে স্ট্যাটাস দেই " লাইফ সাকজ/ লাইফ ফাকজ " সেই বয়সে সে বাবা কে নিয়ে হসপিটালে দৌড়ায় আর চোখে স্বপ্ন রাখে ডাক্তার হয়ে এই ক্যান্সারের চিকিৎসা করার । বাবার নড়াচড়া থেমে যাওয়ার মুহূর্তে সেই ছেলে টাও ভালো ছিলো না,আমাদের মতই । দিল্লির সেই ধর্ষিতা মেয়েটিও ভালো ছিলো না যখন ৫ জন হিংস্র পশু তাকে ছিড়ে খুঁড়ে খাচ্ছিলো । তার যোনি ক্ষত বিক্ষত করে ক্ষুদ্রান্তটি যে মুহূর্তে টেনে বের করে আনে সেই মুহুরতেও সে ভালো ছিলো না , যখন তাকে অত্যাচার শেষে বাস থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় তখন সে কিংবা তার সাথের সঙ্গি টি ভালো ছিলো না । মেয়েটির পরিবার মেয়েটির অবস্থা দেখে ভালো ছিল না । আমাদের মতই তারা ভালো ছিল না। সিরিয়াতে বন্দুকের গুলি খাওয়া ছোট্ট শিশু টি মৃত্যুর আগে বলেছিল -"ঈশ্বরকে আমি সব বলে দিবো ।" তার ছোট্ট কোমল মনে প্রশ্ন ছিল এতো কষ্টের কারন কি? সে তো কারো ক্ষতি করে নি । মৃত্যু যন্ত্রণা থেকে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে না পাওয়ার কষ্টটা বেশি ছিল । ছেলেটিও ভালো ছিল না ,আমাদের মতই । আমরা খুব সহজেই বলে ফেলি আমরা ভালো নেই । জানি না "ভালো নেই" কথাটা বলার স্পর্ধা আমরা কোথায় পাই । এরপর যখন ই বলবেন ভালো নেই উপরের মানুষ গুলোর জায়গায় নিজেকে অন্তত একবার বসিয়ে দেখবেন । আশা করি কিছুটা হলেও ভালো থাকবেন।

Unknown

0 comments:

Post a Comment

 

Copyright @ 2015 KOBISHOVA.